
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার জেএমসি, নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটি পরিচালিত বৃহৎ একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বহুমুখী এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে জ্যামাইকা এলাকায় বাংলাদেশীদের মাঝে গড়ে উঠেছে ভিন্নমাত্রিক একটি বসতি। জেএমসিতে এ কারণে ক্রমাগতই বাড়ছে মুসলিমদের অংশগ্রহণ। সাম্প্রতিক সময়ে জুমার নামাজ এবং রমজানে তারাবি সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় স্থান সংকুলান হচ্ছে না মুসল্লিদের। ফলে জেমসির মূল ভবনটির সম্প্রসারণ জরুরী হয়ে পড়েছে। সাধারণ মুসল্লিদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা কমিটি গ্রহণ করেছে যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত। মুসল্লিদের সম্মতিক্রমে উদ্যোগ নিয়েছে ভবনটি সম্প্রসারণের। এব্যাপারে ইতোমধ্যেই গৃহীত হয়েছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। পরিকল্পিত এই সম্প্রসারণ হলে বর্তমান দ্বিতল ভবনটি চার তলায় উন্নিত করা হবে।

একাজ সম্পন্ন করতে ব্যয় হবে আনুমানিক তিন মিলিয়ন ডলার। আগামী ২৭ এপ্রিল, রোববার সকাল ১১টায় সম্প্রসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। ৮৫-৩৭, ১৬৮ জেএমসি ওয়ের উপর অবস্থিত ভবনের সম্প্রসারণ কাজ শুরুর ঐতিহাসিক এ অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কমিটি ও ট্রাস্টিবোর্ডেও কর্মকর্তাগণ। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের কাংখিত এই সম্প্রসারণ সম্পন্ন হলে মুসল্লিদের ধারণ ক্ষমতা যেমন বাড়বে তেমনি হাফেজী স্কুল, উইক এন্ড ইসলামী শিক্ষা, মহিলা ও বয়স্কদের জন্য সৃষ্টি হবে অধিকতর সুবিধা। জেমমসির এই সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যেই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বড় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে। গত ১৪ এপ্রিল সকালে জেএমসি কর্তৃপক্ষের সাথে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এসময় জেএমসি পরিচালনা কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজে আনুমানিক ৬ মাস এবং অঙ্গসজ্জাসহ পূর্ণাঙ্গ কাজ সম্পন্ন হতে আরো ৬ মাস লাগতে পারে বলে জানান জেএমসি পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী আফতাব মান্নান। সম্প্রসারণ কাজ চলাকালীন মুসল্লিগণ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন সে ব্যাপারে সবধরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান আফতাব মান্নান।
ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাঃ নাজমূল এইচ খান মুসল্লিদেরকে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধনীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতায় জেএমসিকে আমরা একটি আদর্শ এবং অনুকরণীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। সম্প্রসারণ কাজের জন্য আনুমানিক যে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন মিলিয়ন ডলার। আমরা এখনো তার কাছাকাছি পৌছতে পারিনি। এ পর্যন্ত অনুদান পাওয়া গেছে এক মিলিয়ন ডলার। ইনশাল্লাহ সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় একাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জেএমসির নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরো ৫ হাজার ৬৫০ বর্গফুট আয়তন বাড়বে। ফলে বর্তমান ৯ হাজার ৮৪০বর্গফুট মিলে মোট আয়তন দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৪৩৪ বর্গফুট।
বর্তমান দ্বিতীয় তলা থেকে হিফজ স্কুল তৃতীয় তলায় সরানো হলে সেখানে অতিরিক্ত আরো ১৮০জন মুসল্লির নামাজের স্থান সংকুলান হবে। এছাড়া প্রথম তলা থেকে অফিস স্টোরেজ সরালে আরো ৬০ জন মুসল্লির নামাজের জায়গা বাড়বে। বর্তমান ভবনের দুই রুমের মাঝের দেয়াল ভেঙ্গে মিম্বার নিয়ে আসা হবে মাঝামাঝি স্থানে। ইমামের অফিস স্থানান্তর করা হবে চতুর্থ তলায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় ১৯৯২ সালে বর্তমান ঠিকানার প্রাইভেট বাড়িটি ভেঙ্গে জেএমসির নতুন ভবন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্টিত হয় জেএমসির নতুন ভবন। ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে জেএমসি ভবন তথা আল মামুর মসজিদ ভবনের ঘোষণা দেয়া হয়। ভবনটি নির্মাণে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়।
পরবর্তীতে ভবনটি দ্বিতল করা এবং পাশাপাশি আরো একটি প্রাইভেট হাউজ ক্রয় করে মসজিদ ভবনটির পরিধি বাড়ানো হয়।জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বিভিন্ন প্রকল্পঃ আল মামুর স্কুল, জামিয়া কোরানিয়া একাডেমী, উইকেন্ড ইসলামিক স্কুল, জেএমসি লাইব্রেরী, জেএমসি পরিচালনা কমিটি।