
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপনাদের অকুতোভয় সংগ্রাম, প্রাণ বাজি রেখে লড়াই। আপনাদের সাথিরা প্রাণ দিয়ে হলেও একটি ফ্যাসিবাদী শাসককে পরাস্ত করতে পেরেছে। ফ্যাসিবাদী শাসককে পলায়ন করতে বাধ্য করেছেন। দীর্ঘদিন ১৫ বছর ধরে যে শাসন আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো বসে ছিল।’
১৯ এপ্রিল (শনিবার) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘তাঁকে (শেখ হাসিনা) আপনারা দৃঢ়তা, সাহসিকতা দিয়ে, নির্ভীক, অবিচল প্রচেষ্টা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন, যাঁরা প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসকের বিরুদ্ধে বিজয় এসেছে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কারণে রাষ্ট্র সংস্কারের বর্তমান কার্যক্রম চলা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকে এখানে কথা বলতে পারছি, একসঙ্গে বসতে পারছি, তা সম্ভব করে তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আজকের নেতৃত্বের আন্দোলনের কারণে। সে কারণে আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ইতিহাসের অংশ হিসেবে জাতি আপনাদের মনে রাখবে। আপনারা ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায় তৈরি করেছেন।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সে বিজয়ের পাশাপাশি আপনারা সুস্পষ্টভাবে বলছেন একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চান এবং আপনাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে যে আকাঙ্ক্ষা মানুষের মধ্যে ছিল, সেটা মূর্ত হয়ে উঠেছে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। এ অভাবনীয় ও অকুতোভয় গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আপনাদের অবদান স্বীকার করব।’
বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা পর্যুদস্ত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি গণতন্ত্রের সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়। রাষ্ট্রকে কীভাবে এক ব্যক্তির করতলগত করে একটি শাসনব্যবস্থা করেছিল।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে জানিয়ে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ, সবাই মিলে যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের শাসন ফেরত না আসে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী রূপ নেয়। যেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সমস্ত রকম নিপীড়ন মোকাবিলা করতে পারি এবং সে ব্যবস্থাগুলো অপসারণ করতে পারি।’ আলোচনা প্রয়োজনে অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জাতির আকাঙ্ক্ষার জায়গায় জাতীয় সনদ তৈরি করতে।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।